

শরয়ী সমাধান
ফরেক্স এবং বাইনারি ট্রেডিং এর শরয়ী বিধানঃ ১ম পর্ব
১১ জুন, ২০২৫
বর্তমান সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিটকয়েনের মতই আরো দুটি জনপ্রিয় লেনদেন হচ্ছে বাইনারি ট্রেডিং এবং ফরেক্স ট্রেডিং। অনলাইন ভিত্তিক এই লেনদেন অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত, যে কোন লেনদেন করার পূর্বে বা কোন কাজ করার পূর্বে তার ব্যাপারে শরয়ী অবস্থান এবং বিধান কেমন, সেটা জেনে নেয়া উচিত সবার পূর্বে। এই প্রবন্ধে ইনশাআল্লাহ আমরা বাইনারি ট্রেডিং এবং ফরেক্স ট্রেডিংয়ের বিস্তারিত বিধান আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। প্রথমেই বাইনারি ট্রেডিং নিয়ে আলোচনা করব। পরিচয়ঃ বাইনারি ট্রেডিং এটি মুলত একপ্রকার মার্কেট এ্যানালাইসিস। অর্থাৎ অনলাইনে বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ার তথা কারেন্সি কোম্পানি থাকে। কারেন্সি পেয়ারগুলো মুলত একটি ব্যাবসায়িক ইনভেস্ট বা এন্ট্রির মত। যেখানে কারেন্সিতে মানুষ এন্ট্রি নেয়। আরো সহজে বলি। অনলাইনে যেই বেট বা জুয়া সাইট আছে, সেখানে নির্দিষ্ট জিনিস বা বিষয়ের উপর মানুষ বাজি ধরে, বাজি ধরার আগে সে ঐ সাইটের পূর্ব-পর মোটামুটি যাচাই করে নেয় যে বাজি ধরাটা কেমন হতে পারে, কিভাবে কত দামে বাজি ধরবে। কারেন্সি পেয়ার (Currency Pair) হলো ফরেক্স (Foreign Exchange) মার্কেটে দুটি মুদ্রার তুলনামূলক মান। এটি বোঝায়, একটি মুদ্রার দাম অন্য মুদ্রার সঙ্গে কতটা। ধরুন, EUR/USD = 1.10, EUR (ইউরো)ঃ এটি হলো বেস কারেন্সি। এর অর্থ, আপনি মূলত "ইউরো" কিনছেন বা বিক্রি করছেন। USD (মার্কিন ডলার)ঃ এটি হলো কোট কারেন্সি। এর মানে, ১ ইউরো কেনার জন্য ১.১০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। আপনি যদি মনে করেন ইউরো শক্তিশালী হবে বা তার দাম বাড়বে, তাহলে আপনি EUR/USD বাই করবেন। আপনি যদি মনে করেন ইউরো দুর্বল হবে বা তার দাম কমবে, তাহলে আপনি EUR/USD সেল করবেন। একটি কারেন্সি পেয়ার দুইটি মুদ্রার সমন্বয়ে তৈরি হয়। প্রথম মুদ্রাটি বেস কারেন্সি। দ্বিতীয় মুদ্রাটি কোট কারেন্সি। কারেন্সি পেয়ার মানে কি অনেকেই জানে না। আপনি বিদেশ ভ্রমণে যাবেন এবং ডলার কিনতে চান। যদি ১ USD = ১০০ BDT হয়, এর অর্থ হলো ১ মার্কিন ডলার কেনার জন্য ১০০ বাংলাদেশি টাকা প্রয়োজন এটিই একটি কারেন্সি পেয়ার। তো বাইনারি ট্রেডিংয়ে যেকোনো কারেন্সি পেয়ারে এন্ট্রি নেয়ার সময় একজন ট্রেডার ওই কারেন্সি পেয়ারটির বর্তমান অবস্থান, পূর্বের অবস্থান ভালো করে যাচাই-বাছাই করে তারপর এন্ট্রি গ্রহন করে থাকেন। এই যাচাই-বাছাই করাকে ট্রেড এর ভাষায় বলা হয় “ট্রেডিং এনালাইসিস” । অর্থাৎ, কারেন্সি পেয়ারটির প্রাইস কোনদিকে যাবে সেটি আপনি নিজে ভালো করে বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত হিসাবে এন্ট্রি নিচ্ছেন BUY কিংবা SELL এবং সেই সাথে আপনি এটাও ধারনা করে নিচ্ছেন এই কারেন্সি পেয়ারটির সম্ভাব্য মুভমেন্ট কোনদিকে হতে পারে। ট্রেডিং তথা কোন বস্তুর অনুমান ভিত্তিক দর নির্ধারণ করার জন্য এখানে নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়। ঐসময়ের মধ্যেই আপনাকে আপনার কারেন্সি পেয়ারের প্রাইস অনুমান করে ট্রেড করতে হবে। বাইনারি ট্রেডের মুলমন্ত্র হচ্ছে মার্কেট প্রাইসের ফাস্ট মুভমেন্ট। এখানে ট্রেডাররা বেশিরভাগ 30 সেকেন্ড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ 5 মিনিট পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে তারা তাদের মার্কেট প্রাইস একশনের আনুমানিক গতিবিধি লক্ষ্য করে ট্রেড কোট করে থাকেন। ওই সময়ের মধ্যে অনুমান সঠিক হলে প্রফিট এবং ভুল হলে লস হয়ে থাকে। যার মানে হচ্ছে, আপনি যদি 2 মিনিটের জন্য কোনও ট্রেড দিয়ে থাকেন তাহলে ঠিক 2 মিনিট পরই সেটা ক্লোজ হয়ে যাবে। আপনার প্রফিট হোক কিংবা আপনার লসই হোক। উদাহরণস্বরুপ কোন ব্যক্তি কোন স্বর্ণের ব্যাপারে বাজি ধরবে। এখন সেই ব্যক্তি কোনও সোনা সম্পর্কে ট্রেড করার জন্য পূর্বাভাস বা তার অনুমান পেশ করেন যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার দাম কত হবে। এই পূর্বাভাস দেওয়ার অধিকার বা টিকিট একটি নির্দিষ্ট অর্থ (যেমন ৪৪ ডলার) দিয়ে কিনতে হয়। যদি তার পূর্বাভাস সেই নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক হয়, তবে তাকে নির্ধারিত বাইনারি পুরস্কার (যেমন ১০০ ডলার) দেওয়া হবে, যার মধ্যে তার টিকিটের খরচ (যেমন ৪৪ ডলার) কেটে বাকী ৫৬ ডলার তার লাভ হবে। আর যদি তার পূর্বাভাস ভুল হয়, তবে টিকিটের মূল্য (যেমন ৪৪ ডলার) হারিয়ে যাবে। অর্থাৎ বাইনারি ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি ট্রেডের জন্য কোট করে থাকেন, যদি তার প্রাইসের অনুমান সঠিক না হয় তাহলে ঠিক ওই পরিমাণ অর্থই আপনার লস হবে। এই ছিলো বাইনারি ট্রেডিংয়ের পরিচয় প্রকৃতি। পরবর্তী পর্বে শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে এটার বৈধতা কতটুকু পরবর্তী পর্বে সেটা নিয়ে আলোচনা করব আমরা ইনশাআল্লাহ।
বিস্তারিত পড়ুনদৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল (৬ পর্ব একত্রে)
১১ জুন, ২০২৫
দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ ( পর্ব-১) রাতে অনেকেই দ্রুত ঘুমিয়ে যায় অনেকে দেরিতে ঘুমাই। যখনই ঘুমাতে যাই, ঘুমানোর পূর্বে কয়েকটি আমল করতে পারি। সুরা ইখলাস সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস পাঠ করে শরীরে ফুঁক দেয়া। দুই হাত দিয়ে যতদুর সম্ভব শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়া। আয়াতুল কুরসি পাঠ করা সুরা বাক্বারা এর শেষ দুই আয়াত পাঠ করা। আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।" (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭) রাসুল (সা.) বলেন, "তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।" (বুখারি, হাদিস : ২৩১১) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। কোনো ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এ দুই আয়াত পড়লে তা তাদের গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, "যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট।" (বুখারি, হাদিস : ৫০৪০) আল্লাহ পাক তৌফিক দান করুন। আমিন। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-২) প্রতি চন্দ্র মাসে ধারাবাহিক ৩ টি রোজা রাখতে হয়। এর ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে উক্ত রোজাগুলিকে আইয়ামে বীজের রোজা বলে। আইয়ামে বীজ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ। ধারাবাহিক এই ৩ দিন রোযা রাখা সুন্নত। সুনানে নাসাঈ শরিফের মধ্যে হাদিস এসেছেঃ عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: صِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صِيَامُ الدَّهْرِ، وَأَيَّامُ الْبِيضِ صَبِيحَةَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ. হযরত জারীর ইব্ন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিতঃ "প্রত্যেক মাসের তিন দিন সওম (রোযা) পালন করা সারা জীবন সওম (রোযা) পালন করার সমতুল্য।" আর আইয়্যামুল বীজ- তেরো, চৌদ্দ এবং পনের তারিখ। সহিহ বুখারি শরিফের মধ্যে এসেছেঃ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ : قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَلَمْ أُنَبَّأْ أَنَّكَ تَقُومُ اللَّيْلَ وَتَصُومُ ؟ " فَقُلْتُ : نَعَمْ. فَقَالَ : " فَإِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتِ الْعَيْنُ، وَنَفِهَتِ النَّفْسُ، صُمْ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، فَذَلِكَ صَوْمُ الدَّهْرِ، أَوْ كَصَوْمِ الدَّهْرِ ". قُلْتُ : إِنِّي أَجِدُ بِي - قَالَ مِسْعَرٌ : يَعْنِي قُوَّةً - قَالَ : " فَصُمْ صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَكَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلَا يَفِرُّ إِذَا لَاقَى ". " অর্থাৎ প্রতি মাসে ৩ টি করে রোজা রাখা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।" আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-৩) জান্নাতী কে হবে!! এমন একটি দোআ এবং ইস্তেগফার আছে যদি কোন ব্যক্তি সেই ইসতেগফার বা দোআ দিনের বেলা মন থেকে বলে আর ঐ দিন সন্ধ্যার আগে মারা যায়, সে জান্নাতীদের শামিল হবে। তেমনি যে তা রাতের বেলায় মন থেকে বলে আর ভোর হওয়ার আগেই মারা যায় সে জান্নাতীদের শামিল হবে। ইস্তেগফারটি নিন্মরুপঃ اللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ. উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি ওয়ানা আবদুকা, ওয়ানা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া'দিকা মাসতাতা'তু, আউযুবিকা মিন শাররি মা সনা'তা আবুউ লাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ লাকা বিযানবিই, ফাগফিরলি, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনুউবা ইল্লা আনতা! ( সহীহ বুখারী : ৬৩০৬ ) আল্লাহ ইস্তেগফার মুখস্ত করে প্রতিদিন আমলের তৌফিক দান করুন। আমিন। (বিঃদ্রঃ আরবি এই ইস্তেগফার উচ্চারণ কখনোই বাংলায় সম্ভব নয়। বাংলায় যেটা লিখেছি সেটা উচ্চারণ বিকৃতি। কেউ ব্যাকারণ নীতিমালা না জানলে শুদ্ধভাবে পাঠ করতে পারবে না। উক্ত ইস্তেগফার এর সঠিক উচ্চারণ শুনতে চাইলে নিকটস্থ কোনো হাফেজ বা আলেমের শরণাপন্ন হোন) দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-৪) দুরুদ পাঠের ফজিলতঃ আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন- من صلى علي صلاة صلى الله عليه بها عشراً "যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন।"-সহীহ মুসলিম ১/১৬৬; জামে তিরমিযী ১/১০১ অন্য হাদীসে আছে, হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- من صلى علي صلاة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات، وحطت عنه عشر خطيئات، ورفعت له عشر درجات. "যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে।"-সুনানে নাসায়ী ১/১৪৫। দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় আমলঃ (পর্ব-৪) হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنّةِ إِلّا أَنْ يَمُوتَ. "প্রতি ফরয নামাযের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।" (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ী, হাদীস ১০০) ফজরের নামাযের পর সূযোর্দয় পর্যন্ত মসজিদে বসে যিকির করতে থাকা, এরপর দুই রাকাত নামায পড়া। আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ مَنْ صَلّى صَلَاةَ الْغَدَاةِ فِي جَمَاعَةٍ، ثُمَّ جَلَسَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ، انْقَلَبَ بِأَجْرِ حَجّةٍ وَعُمْرَةٍ. قال المنذري في الترغيب (৬৭২) والهيثمي في المجمع (১৬৮৯৭): إسناده جيد. "যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামায আদায় করল, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করল, এরপর দুই রাকাত নামায আদায় করল, সে ব্যক্তি হজ্ব ও ওমরার সওয়াব নিয়ে ফিরল।" (মুজামে কাবীর, তবারানী, হাদীস ৭৭৪১) দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-৬) রাতে ঘুমানোর পূর্বে অজু করে ঘুমানো এবং ডান কাত হয়ে ঘুমানো। সহিহ বুখারি শরীফে এব্যাপারে নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছেঃ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের উযূর মতো উযূ করে নেবে। তারপর ডান কাত হয়ে ঘুমাবে।" ( বুখারি :২৪৭ ) মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ "ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহু আমাকে বলেছেন; তুমি অবশ্যই অজু অবস্থায় শয়ন করবে। কারণ মানুষ যে অবস্থায় মারা যাবে; সে অবস্থায় তাকে উঠানো হবে কেয়ামতে" ( মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ১৯৮৮৪ )
বিস্তারিত পড়ুনসেক্যুলার দলসমূহ সমর্থনের হুকুম
১১ জুন, ২০২৫
একটি আদর্শ গৃহীত না বর্জিত সেটা নির্ধারণ হবে তার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে। যদি কোন আদর্শে বিদআহ থাকে তাহলে সেই আদর্শ বর্জিত এবং এর ধারকবাহক বা নীতিনির্ধারকদের বলা হয় বিদআতী। তবে এই আদর্শ সংশ্লিষ্ট সকলেই বিদআতী নয়। যদিও দলগতভাবে তাদেরকে বিদআতী বলা হবে। তবে ব্যক্তি বিশেষ সকলের হুকুম একই হবে না। একইভাবে কোন আদর্শে কুফরের সংমিশ্রন থাকলে উক্ত আদর্শ আবশ্য পরিত্যাজ্য। চাই কুফরের পরিমান কম হোক বা বেশী। অনেকে মনে করেন কোন আদর্শে ১/২ বিষয় কুফর থাকলে সমস্যা নেই। তাদের উক্ত মনোভাব মোটেই সঠিক নয়। এটি একটি প্রসিদ্ধ ভ্রান্তি। কারণ ঈমান-কুফর কখনো একই সাথে থাকে না, থাকতে পারে না। ঈমানের পূর্ব শর্ত হচ্ছে কুফর মুক্ত হওয়া। সুতরাং যতক্ষণ ১টি হলেও কুফর থাকবে ততক্ষণ তা মৌলিকভাবে কুফরী আদর্শ হিসেবেই পরিগনিত হবে। এটিই বিশুদ্ধ কথা। এই আদর্শের মূল ধারকবাহক ও নীতিনির্ধারকরা সুনিশ্চিতভাবে কাফের। তবে না বুঝে দুনিয়াবী স্বার্থে এত লিপ্ত প্রত্যেকের উপর কুফর-রিদ্দাহর হুকুম দেয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, তারা সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে আছে এবং তাদেরকে দলগতভাবে মুরতাদ বলা উচিত। সেকুলারিজমের মূল হচ্ছে ধর্মমুক্ত পৃথিবী। ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্মের কোন গণ্ডি থাকবে না। এইজন্য 'সেকুলারিজম'কে বলা হয় 'ধর্মহীনতা' বা 'আললা-দ্বীনীয়্যাহ'। বাংলাদেশে যে সমস্ত দল নিজদের সুশীল প্রমাণ করতে সেকুলার বলে তারা শিরকে আকবারে লিপ্ত। মুফতী তাকী উসমানী হাফি. তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিমে 'ইমারাহ' তথা 'নেতৃত্ব' এর অধ্যায়ের শুরুতেই 'সেকুলারিজম'কে শিরকে আকবার বলে প্রমাণ করেছেন। বিএনপি হলো দলগত মুরতাদ। তারা দলগতভাবে সবাই কুফরে লিপ্ত। আর তাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা সুনির্দিষ্টভাবেই মুরতাদ। একজন সেক্যুলার জন্মগত মুশরিকের চাইতেও জঘন্য কাফির। তাই জেনেবুঝে কোন মুসলিমের জন্য বিএনপিকে সমর্থন করা, তাদের সাথে একাত্মতা পোষন করা, তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া ও তাদের দালালী করা জায়িয নেই। বরং ক্ষেত্র বিশেষে তার ঈমানও চলে যাওয়ার আশংকা প্রবল যদি বিএনপির চিন্তা-ফিকিরের সঙ্গে জেনেবুঝে একাত্মতা পোষণ করে। মুলঃ শাইখ হাসসান সাবিত যুবাইর হাফিঃ শরয়ী সম্পাদনাঃ বান্দা Hm Sulayman
বিস্তারিত পড়ুনজমি বন্ধক রেখে তা ভোগ করা যাবে কিনা
১১ জুন, ২০২৫
২০১৮ সালে একবার তাবলীগ সফরে গিয়েছিলাম। গ্রামের নাম মনে আসছে না। সেখানে অনেক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিলো বেশ আন্তরিকভাবেই। দ্বীন শিখতে চাইত তারা। সবকিছু খোজ নেয়ার পর তাদের জীবিকা কিভাবে নির্বাহ হয় সেটা জানার চেস্টা করলাম। সবাই বলতে গেলে কৃষি কাজ করে। পরে একজন ভাই বললেন আমরা তো সবাই কৃষি কাজ করি, জমি বর্গা নেই আর বন্ধকী জমি রেখে চলি। আমি বললাম বন্ধকী জমি তো রিস্ক, শরীয়তের অনেক বিধি-নিষেধ আছে সে ব্যাপারে। তখন তিনি বললেন হযরতঃ আমরা কট রাখি! বললাম কট কি জিনিস? তখন তিনি বললেনঃ জমি বন্ধক রাখার যে পদ্ধতি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সেটা হলো বন্ধকদাতা বন্ধক গ্রহীতার নিকট থেকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে আর বন্ধকগ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকে। যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন জমি হস্তান্তর করে। এটাকে কোথাও কোথাও কট রাখাও বলা হয়। এছাড়াও তিনি আরো একটি পদ্ধতির কথা বললেন যেঃ আরেকটি পদ্ধতিতে আমাদের এখানে জমি বন্ধক রাখা হয় ৷ এটিও উপরের মতোই। তবে পার্থক্য হল, এক্ষেত্রে যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন বছর হিসাব করে বন্ধকগ্রহীতা কিছু টাকা কম নেয়। যেমন-কেউ এক কাঠা জমি বন্ধক নিল দশ হাজার টাকায় এবং সে দু বছর এ জমি ভোগ করে। দু বছর পর টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় পাঁচশ টাকা করে এক হাজার টাকা কম নেয়। কেউ কেউ মাসে মাসে ১০০ টাকা করে ভাড়া প্রদান করে! অথবা কেউ কেউ জামানত হিসেবে ৩/৪ লাখ টাকাও রাখে, জমিদাতাকে বাৎসরিক ভাড়াও প্রদান করে, তবে পরবর্তীতে ঐ জামানতের টাকা ফিরিয়ে নেয় আবার! আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বস্তুত এই জাতীয় লেনদেনই চলছে সমাজে। এক্ষেত্রে মুল মাসআলা হলোঃ ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। প্রথম পদ্ধতিটি নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। এখন জমিদাতা ঐ টাকা ব্যবহার করলে তা সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সুতরাং দুটি কারবারই নাজায়েয। অবশ্য বৈধভাবে করার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করবে। এক্ষেত্রে জমির মালিক জমি ভাড়া দিবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৮ হাজার টাকা। মালিকের ৩২ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৪ বছরের জন্য জমি ভাড়া দিবে। এক্ষেত্রে অগ্রিম ৩২ হাজার টাকা নিয়ে নিবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে। শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল আসল ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৪৬৮ উনাকে বিস্তারিত বিষয়টি বুঝালে অনেক আফসোস করেন। পরে মজলিসে বিস্তারিত আলোচনা করি। গ্রামবাসী সবাই বলেন যে আমরা সামনে থেকে বাদ দিব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তৌফিক দিন আমাদেরকেও।
বিস্তারিত পড়ুনমাসবুকের নামাজ সংক্রান্ত কয়েকটি জরুরী মাসআলা
১১ জুন, ২০২৫
প্রথম বিষয়ঃ অনেকে মসজিদে যেয়ে রুকু অবস্থায় ইমামকে পায়। এমতবস্থায় প্রায় সবাই তাকবির বলে হাত বেধে দাড়ায় তারপর রুকুতে শরিক হয় যার ফলে রুকু মিস করে অনেক সময়। অনেকে আবার রুকুতে যেতে যেতে তাকবির বলে রুকুতে শরিক হয়। দুটি পদ্ধতিই ভুল। ইমামকে রুকুতে পেলে ফরজ কাজ হলো তাকবিরে তাহরিমা বলা। এটা ফরজ। এটা দিয়ে নামাজে শরিক হবে। অর্থাৎ প্রথমে সোজা দাড়াবে। দাড়ানো অবস্থায় হাত তুলে তাকবির বলবে। তবে হাত বাধবে না। বরং হাত তুলে আল্লাহু আকবার বলে হাত ছেড়ে দিবে। আবার তাকবির বলে রুকুতে যাবে। রুকুতে যাওয়ার জন্য এই তাকবির বলা সুন্নাত। না বলতে পারলেও সমস্যা নাই। কিন্তু সোজা হয়ে প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা বলা ফরজ। রুকুতে যেতে যেতে রুকুর তাকবির বলে নামাজে শরিক হলে নামাজ হবে না। পুনরায় পড়তে হবে। যদি অন্তত ইমামকে রুকুতে আধা সেকেন্ড ও পায় তাহলেও ঐ রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। অর্থাৎ সে রুকুতে যাওয়ার আধা সেকেন্ড পর ইমাম রুকু থেকে উঠলেও রাকাত পেয়েছে গন্য হবে। মূল শর্ত হলো ইমামকে রুকুতে পাওয়া অন্তত অল্প সময়ের জন্য হলেও। সামান্য সময় পেলেও সে ঐ রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। অনেকে বলে তিন তাসবিহ সময় পরিমাণ পেতে হবে। কথাটি সঠিক নয়। কিছু সময় পরিমাণ পেলেই হবে। দ্বিতীয় বিষয়ঃ যারা মাসবুক তারা ইমাম সালাম ফিরানো শেষ করার আগেই উঠে দাড়ায়, ১ সালাম শেষ হতেই দাড়িয়ে যায়। এটি ভুল পদ্ধতি। উভয় সালাম ফিরানো শেষ হবার পরেই মাসবুক উঠে দাড়িয়ে বাকি নামাজ শেষ করবে। তৃতীয় বিষয়ঃ মাসবুক ব্যক্তি অনেক সময় ভুলে ইমামের সঙ্গে সালাম ফিরিয়ে ফেলে। যদি ইমামের সঙ্গে সঙ্গে অথবা ইমামের আগে সালাম ফিরায় তাহলে নামাজে সমস্যা হবে না এবং শেষে সাহু দিতে হবে না। কিন্তু যদি ইমামের পরে সালাম ফিরায় তাহলে অবশ্যই শেষে সাহু সিজদা দিতে হবে। এটা আমরা কেউই করি না বলতে গেলে। আর যদি মাসবুক মনে করে ইমামের সঙ্গে সালাম ফিরানো নিয়ম তাহলে তার নামাজ নস্ট হয়ে যাবে। পুনরায় পড়া ওয়াজিব। তারমানে ইমামের এক সালাম ফেরানো শেষ, তারপর মুক্তাদি সালাম ফেরাচ্ছে এটা হলে সাহু সিজদা দিতে হবে। আর যদি ইমামের সাথে সাথেই দেরি না করে সালাম ফিরায় তাহলে সাহু দিতে হবে না। মাসবুক ভুলে ইমামের পরে উভয়দিকে বা একদিকে সালাম ফিরালেই সাহু সিজদা দিবে। চতুর্থ বিষয়ঃ অনেক সময় মসজিদে যেয়ে ইমামকে সিজদারত অবস্থায় পেলে দাড়িয়ে থাকি যে কখন সিজদা থেকে উঠবে তখন শরিক হব! এটি ভুল কাজ। বরং উচিত হলো ইমামকে যে অবস্থায় পেয়েছে সেভাবেই নামাজে শরিক হওয়া। যদিও সিজদারত অবস্থায় পেলে ঐ রাকাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে না। কোন রাকাত ধর্তব্য হতে হলে কমপক্ষে ঐ রাকাতের রুকু পেতে হবে। উক্ত বিষয়গুলি খেয়াল রাখি।
বিস্তারিত পড়ুনকাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করার বিধান
১১ জুন, ২০২৫
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করতে হলে সেই মোজায় তিনটি শর্ত পূরণ হতে হবে। এমন মোজার ওপর মাসেহ করলে অজু আদায় হবে। শর্তগুলো হলোঃ মোজাগুলো এত ঘন বা মোটা হতে হবে যে, এর ওপর পানি ঢাললেও তা ভেদ করে পায়ে পৌঁছাতে পারবে না। মোজাগুলো এমন মজবুত হতে হবে যে, জুতা ছাড়াই সেগুলো পরে তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটা সম্ভব হয়। মোজাগুলো এমন হতে হবে যে, কোনো কিছু দিয়ে বেঁধে না রাখলেও তার পুরুত্ব ও শক্ত হওয়ার কারণে নিজে থেকেই পায়ে টিকে থাকতে পারে। তবে এটি শুধু কাপড়ের টান বা আঁটসাঁট থাকার কারণে টিকে থাকবে না। তাই যদি কোনো কাপড়ের মোজায় এসব শর্ত পাওয়া না যায়, যেমনঃ এমন মোজা, যার ভেতর দিয়ে পানি পায়ে পৌঁছে যায়। অথবা এমন মোজা, যা পরে জুতা ছাড়া তিন মাইল হাঁটা সম্ভব নয়। অথবা এমন মোজা, যা শক্তি বা পুরুত্বের অভাবে নিজে থেকে পায়ে টিকে থাকতে পারে না এবং বাঁধার মাধ্যমে পায়ে রাখতে হয়, তাহলে সেই মোজার ওপর মাসেহ করা বৈধ নয়। এ কারণে প্রচলিত সুতির বা উলের তৈরি মোজা, যেগুলোতে এই শর্তগুলো অনুপস্থিত এবং যেগুলোর ওপর বা নিচে চামড়া লাগানো থাকে না, সেগুলোর ওপর মাসেহ করা বৈধ নয়।
বিস্তারিত পড়ুনড্রপ শিপিং বিজনেসের শরয়ী হুকুম
১১ জুন, ২০২৫
বিজনেসের ধরণঃ ড্রপ শিপিং বিজনেসের ধরন হল, যায়েদের একটি পন্যের প্রয়োজন, সে আমরের সাথে পন্যের দাম নির্ধারণ করে পন্য ক্রয় করল। অথচ আমরের হাতে উক্ত পন্যটি নেই। সে বকরের কাছ থেকে আরো কম মূল্যে পন্যটি ক্রয় করে যায়েদের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বললো। বকর যায়েদের ঠিকানায় পন্যটি পৌঁছে দিল। এই হল ড্রপ শিপিং বিজনেসের ধরন। ড্রপ শিপিং বিজনেসের হুকুমঃ ইসলামী শরীয়ায় ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হলঃ 'পন্য হস্তগত হওয়ার আগেই বিক্রি বৈধ নয়' হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে, عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلاَ يَبِعْهُ حَتَّى يَسْتَوْفِيَهُ " . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَأَحْسِبُ كُلَّ شَىْءٍ مِثْلَهُ . ইবনু আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো খাদ্য বস্তু ক্রয় করবে, সে হস্তগত হওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করতে পারবে না। ইবনু আব্বাস রাদি. বলেন, আমি মনে করি সকল পন্যের ক্ষেত্রে এই একই হুকুম। (সহীহ মুসলিম ৩৬৯৪) আমরা উদাহরণে দেখেছি ড্রপ শিপিং বিজনেসের ক্ষেত্রে এই মূলনীতি ভঙ্গ হচ্ছে, পন্য হস্তগত হওয়ার পূর্বেই বিক্রি করা হচ্ছে, তাই শরীয়াহর আলোকে ড্রপ শিপিং বিজনেস বৈধ নয়। ড্রপ শিপিং বিজনেসের এর বৈধ সুরতঃ তবে উক্ত বিজনেসের কিছু বৈধ পদ্ধতি হতে পারে, আমরা তা উল্লেখ করছি। ক] ড্রপ শিপিং বিজনেসের পদ্ধতি বর্ণনানুসারে, গ্রাহক যায়েদ আমরের সাথে পন্যের একটি বিক্রয় চুক্তি করবে, ক্রয় বিক্র চূড়ান্ত করবে না; বরং অ্যাগ্রিমেন্ট টু সেল বা ক্রয় বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতি নিবে মাত্র। তারপর আমর বকর থেকে পন্য ক্রয় করে নিজে হস্তগত করতে না পারলে অন্য কাউকে হস্তগত করার উকিল বানাবে। এরপর নির্ধারিত মূল্যে যায়েদের কাছে বিক্রয় করবে এবং উকিলের মাধ্যমে সেল করে দিবে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষনীয়ঃ উক্ত পদ্ধতিতে মালিকানা ক্রেতা তথা যায়েদের নিকট হস্তান্তর হবে না। মালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে তা ক্রেতা যায়েদের নিকট বর্তাবে না; বরং দায়ভার আমরের হবে। ক্রয়বিক্রয়ের চুক্তির পর যদি পন্য অন্য কারো নিকট বিক্রি করে দেয় তাহলে বিক্রয় শুদ্ধ হবে তবে তা নৈতিকতা বিরুদ্ধ হবে। উপরোক্ত কারণগুলো এ জন্য যে, বিক্রয়ের চুক্তি হয়েছে কেবল, পরিপূর্ণ সংঘটিত হয়নি। খ] আরেকটি পদ্ধতি হল, মূল বিক্রেতা তথা উদাহরণ অনুসারে বকর, দ্বিতীয় বিক্রেতা বা মাধ্যম আমরকে নিজের এজেন্ট নিয়োগ দিবে এভাবে যে, অমুক পন্যটি তুমি যায়েদের কাছে বিক্রি করে দাও, যার মূল্য থেকে নির্ধারিত পার্সেন্ট বা নির্ধারিত টাকা পারিশ্রমিক হিসাবে পাবে। উক্ত পদ্ধতিতেও কিছু বিষয় লক্ষনীয়ঃ মাধ্যম এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ থাকবে, মূল বিক্রেতা হিসাবে নয়। পন্যের অতিরিক্ত মূল্য পারিশ্রমিক হিসাবে গ্রহণ করবে। পারিশ্রমিক অনির্দিষ্ট বা অস্পষ্ট থাকতে পারবে না, নির্দিষ্ট হতে হবে। সুতরাং উল্লিখিত দুই পদ্ধতিতে ড্রপ শিপিং বিজনেস করলে তা শরীয়াহর আলোকে বৈধ হবে, অন্যথায় নয়। তথ্যসূত্র: عن حكيم بن حزام قال : أتيت رسول الله صلی الله عليه وسلم فقلت : يأتيني الرجل يسألني من البيع ما ليس عندي أبتاع له من السوق ثم أبيعه ؟ قال : لا تبع ما ليس عندك (سنن الترمذى، رقم-1232) فنقول من حکم المبيع اذا کان منقولا ان لايجوز بيعه قبل القبض….واما اذا تصرف فيه مع بائعه فان باعه منه لم يجز بيعه اصلا قبل القبض (الفتاوى الهندية-3/13) وشرطها : کون الأجرۃ والمنفعة معلومتين، لأن جهالتهما تفضي إلی المنازعة (رد المحتار، دار الفكر-5/6، كتاب الاجارة)
বিস্তারিত পড়ুনলুডু, পাশা, দাবা খেলার শরয়ী বিধান
১১ জুন, ২০২৫
পাশা, দাবা, লুডু ইত্যাদি গুটি বা কার্ড জাতীয় বস্তু দিয়ে খেলা হয়। গুটি বা এজাতীয় বস্তু দ্বারা অনুমান নির্ভর খেলাকে হাদীসের পরিভাষায় 'নারদাশীর' বা 'শতরঞ্জ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর 'শতরঞ্জ' 'নারদাশীর' বা পাশাজাতীয় সকল খেলা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম। এ সম্পর্কিত কিছু হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ যে ব্যক্তি 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল, সে নিজের হস্ত শূকরের রক্তে রঞ্জিত করল। (মুসলিম ২২৬০; আবূ দাউদ ৪৯৩৯) অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ যে ব্যক্তি 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করল। (আবু দাউদ ৪৯৩৮) এক বর্ণনায় এসেছে, عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَرَّ عَلَى قَوْمٍ يَلْعَبُونَ الشِّطْرَنْجَ فَقَالَ: مَا هَذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ؟ لَأَنْ يَمَسَّ جَمْرًا حَتَّى يُطْفَأَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّهَا. হযরত আলী রা. একবার দাবা খেলায় লিপ্ত কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদের কে বললেন, এই মুর্তিগুলো কী, যাদের সামনে তোমরা বসে আছো ? এগুলো স্পর্শ করার চেয়ে জলন্ত অঙ্গার নির্বাপিত হওয়া পর্যন্ত তা হাতে রেখে দেওয়া ভাল। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ১০/২১২) ( সায়্যিদুনা আলী রাদি. এর উক্ত আছারে দাবা সম্পর্কে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা এসেছে, দাবা গুটিতে রাজা, ঘোড়া ইত্যাদি গুটিগুলো মূর্তির মতই আকৃতি থাকে, যা ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক সুস্পষ্ট হারাম) অভিধানবেত্তাগণ 'নারদাশীর' এর অর্থ করতে গিয়ে বলেন, নারদাশীর বলতে সে সকল খেলাকে বুঝায় যাতে কাঠ, হাড় বা প্লাস্টিকের তৈরী বাক্স কিংবা চৌকো রয়েছে। যেমন পাশা, লুডু, দাবা, শতরঞ্জ ইত্যাদি, যা মূলত ভাগ্য ও অনুমাননির্ভর। (লিসানুল ‘আরাব ৩/৪২১; আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব ২/৯১২) ফুকাহায়ে কেরামের অভিমতঃ ইমাম বুরহানুদ্দীন মারগিনানী রহি. বলেন, কেউ কেউ বলে থাকেন, দাবা পাশা খেলা মুবাহ (অর্থাৎ হারাম নয়) কেননা তা অনুভূতি শক্তি বাড়ায়, বুঝ শক্তি শানিত করে। এমন একটি বর্ণনা ইমাম শাফেয়ী থেকে রয়েছে। আমরা বলব রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের ভিত্তিতে, ‘যে 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল সে নিজের হাত শূকরের রক্তে রঞ্জিত করল’ তাই এটি এমন খেলার অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ তায়ালা থেকে বিমুখ করে রাখে। সুতরাং তা হারাম হবে। (হিদায়া ৪/৪৭৮) ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি. বলেন, والنرد حرام عند الأئمة الأربعة سواء كان بعوض أو غير عوض চার মাযহাবের ইমামদের দৃষ্টিতে 'নারদ' (লুডু, দাবা, পাশা) খেলা হারাম, চাই তাতে বাজী ধরা হোক বা না হোক। (মাজমুউল ফাতাওয়া ৩২/২৪৪) ইমাম আশরাফ আলী থানবী রহি. বলেন, দাবা খেলায় (বাজী থাকুক বা না থাকুক) আমাদের (আহনাফের) নিকট তা হারাম... আর তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীসের ভিত্তিতে, ‘যে ব্যক্তি 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল, সে নিজের হাত শূকরের রক্তে রঞ্জিত করল।’ (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৪০) কোনো জিনিস উপকারী হলেই বৈধ হয় না কেউ কেউ দাবি করেন, দাবা খেলা যেহেতু উপকারী তাই তা বৈধ হওয়া উচিত। তাদের এই কথার জবাব ইমাম বুরহানুদ্দীন মারগিনানী রহি. দিয়েছেন, (যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে) তাছাড়া কোনো কিছু উপকারী হলেই তা বৈধ হয়ে যায় না। বৈধ হতে হলে শরীয়াহর মূলনীতিতে উত্তীর্ণ হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মদ হারাম করতে গিয়ে 'মদের মধ্যে কিছু উপকারিতা আছে' বলে উল্লেখ করেছেন, তবে মদের মধ্যে যেমন উপকারের চেয়ে ক্ষতির দিকটাই বেশি, ঠিক তেমনিভাবে দাবা বা এজাতীয় খেলায় কিছুটা মাথা খাটানো প্রয়োজন পড়লেও অনেক কারণে এটি শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। তাই কিছু উপকার থাকলেই তা বৈধ হবার দলীল নয়। এজাতীয় খেলা হারাম হওয়ার কারণ, প্রথমত নুসুসের আলোকে যা নিষিদ্ধ হবে, তা কোনো প্রশ্ন বা যুক্তি না খুঁজে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়াই মুমিনের পরিচয়। ক] ইসলামি শরীয়াহর একটি নীতি হল, সময় অপচয়কারী কোনো বিষয় ইসলামে অনুমোদিত নয়। দাবা এমন একটি খেলা, যার পিছে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করতে বাধ্য করবে। খ] দাবা লুডু ইত্যাদি খেলা গুলোতে জুয়ার আশংকা থাকে। (মোবাইল বা কম্পিউটারে পয়েন্ট পাওয়া যায়) যা শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ। গ] দাবা বা শতরঞ্জের গুটিগুলো মূর্তি সদৃশ। এটাও ইসলামি শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ। সুতরাং দাবা, পাশা, তাশ ও লুডু বা এজাতীয় খেলা শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয়। চাই তা কম্পিউটার বা মোবাইলে খেলা হোক অথবা বাস্তবে খেলা হোক। এ সমস্ত খেলা থেকে বিরত থাকা মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
বিস্তারিত পড়ুনকুরবানীর গোশত তিনভাগে বন্টনের হুকুম
১১ জুন, ২০২৫
কিছুদিন বাদে কুরবানী। কুরবানির দিন আসলে প্রায় প্রতিটি এলাকায় একটি বদ প্রথা দেখা যায়। মানুষের বাড়ি বাড়ি থেকে গোস্ত সংগ্রহ করে অথবা মসজিদ থেকে মাইকে মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে প্রত্যেক মানুষের গোশতের তিন ভাগের একভাগ মসজিদে জমা করা হয়। কোন কোন জায়গায় দেখা যায় যে কোন ব্যক্তি যদি তার অংশের গোশত থেকে মসজিদে না দিতে চায় তাহলে অনেক সময় তাকে নিন্দাবাদ জানানো হয় ,তাকে তিরস্কার করা হয় এবং অনেক সময় কোন কোন ব্যক্তিকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে সামাজিকতা এবং চক্ষু লজ্জার কারণে মানুষ মসজিদে গোশত দিয়ে আসতে বাধ্য হয়। অতঃপর মসজিদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ সে গোশত ফকির মিসকিনদের মধ্যে এমনকি অনেক কোরবানি দাতার মধ্যেও বিতরণ করে থাকে। সবার আগে আমাদেরকে একটা জিনিস বুঝতে হবেঃ কোরবানি করা আলাদা একটি বিধান আর কোরবানির গোশত দান করা ভিন্ন হুকুম। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানির গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করা এটি মুস্তাহাব। অর্থাৎ সামর্থ্যবান ব্যক্তি তার গোশতকে তিন ভাগ করবে। এক অংশ গরিব-মিসকিন ও অসহায়দেরকে দান করা, এক অংশ গরীব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া। আর এক অংশ নিজের জন্য রাখা। এটি হল মুস্তাহাব আমল অর্থাৎ যদি এরকম তিন ভাগে ভাগ করতে পারে তাহলে ভালো এবং সে অনেক সওয়াবের অধিকারী হবে আর যদি না করে তাহলে কোন প্রকার গুনাহ হবে না এবং শরীয়তের পক্ষ থেকে তাকে নিন্দা ও জানানো হবে না। বরং, কোন ব্যক্তি যদি তার পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ার কারণে তার কুরবানীর অংশের পুরো গোস্তটাই পরিবারের জন্য রেখে দেয় তাহলেও কোন প্রকার নূন্যতম সমস্যা নাই। এটি সম্পূর্ণ মুস্তাহাব একটি আমল এ ব্যাপারে কোন মানুষকে জোরাজুরি করা, চাপ প্রয়োগ করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ। কোন মানুষের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে গ্রহণ করা শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম। আর এভাবে মসজিদে গোস্ত একত্রিত করে জমা করে সকলকে বিতরণ করা এটিও শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম পদ্ধতি নয়। বরং কোরবানি দাতা নিজে সাধ্যমত পছন্দমত যাকে ইচ্ছা তাকে দান করবে এটি তার ইচ্ছাধীন। অতএব এই নাজায়েজ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসা আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক। বিষয়টি মাসিক আল কাউসার থেকেও বিস্তারিত দেখতে পারেন। সেখানের ফতোয়ায় বলা হয়েছেঃ কোরবানি করা এবং কোরবানির মাংস দান করা ভিন্ন দুটি আমল। সওয়াবের নিয়তে পশু জবাইয়ের দ্বারা কোরবানির ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। আর কোরবানির মাংস বিতরণের ব্যাপারে ইসলামে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তা বিতরণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং দান করলে সওয়াব পাওয়া যাবে। কুরবানী করা এবং কুরবানীর গোশত দান করা ভিন্ন ভিন্ন দুটি আমল। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইখলাসের সাথে পশু জবাই করার দ্বারাই কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। আর কুরবানীকারীর জন্য তার কুরবানীর গোশতের ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হল, সে নিজ পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খাবে এবং পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, যারা কুরবানীর সামর্থ্য রাখে না তাদেরও দান করবে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (কুরবানীর গোশত) তোমরা খাও, জমা করে রাখো এবং (গরীব-অসহায়দেরও) দান করো।Ñহাদীসঃ ১৯৭১ অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা খাবে এবং অন্যদেরও খাওয়াবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ১৯৭৩ তবে দানের ব্যাপারে কুরবানীকারীর উপর শরীয়ত কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি; বরং প্রত্যেককে তার অবস্থা অনুপাতে দান করতে বলা হয়েছে। অবশ্য সামর্থ্যবানদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তম হল, মোটামুটি তিন ভাগ করে এক অংশ গরিব-মিসকিন ও অসহায়দেরকে দান করা, এক অংশ গরীব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া। আর এক অংশ নিজের জন্য রাখা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন। আরেক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক ভাগ ভিক্ষুক ও অসহায়দের দান করতেন। Ñআল মুগনী ১৩/৩৭৯ উল্লেখ্য, এ বণ্টন উত্তম জরুরি বা আবশ্যক নয়। তেমনি একেবারে ওজন করে তিন ভাগ করাও আবশ্যক নয়। বরং কুরবানীকারীর জন্য এতে তারতম্য করার অবকাশ আছে। আরো উল্লেখ্য যে, এটি যেহেতু একটি মুস্তাহাব আমল তাই সামর্থ্যবানদের এর উপর আমল করা উচিত। আর কারো পরিবারের সদস্য বেশি হলে কিংবা নিজেদের প্রয়োজন বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রয়োজন পরিমাণ গোশত রাখতে পারবে, এটা তাদের জন্য অনুত্তম হবে না। যিলকদ ১৪৩৬ || সেপ্টেম্বর ২০১৫ কুরবানীর গোশত বণ্টনের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকায় প্রচলিত একটি সমাজপ্রথা। সাধারণ দৃষ্টিতে এটি একটি ভালো উদ্যোগ মনে হতে পারে; কিন্তু কোনো সামাজিক প্রথা বা রীতি পালন করার জন্য তা শরীয়তের দৃষ্টিতে শুদ্ধ ও আমলযোগ্য কি না— তাও নিশ্চিত হতে হয়। ভালো নিয়ত থাকলেও শরীয়ত সমর্থন করে না অথবা ইসলামের নীতির সাথে মানানসই নয় এমন কোনো কাজ করা বা এমন কোনো রীতি অনুসরণ করার সুযোগ নেই। প্রশ্নোক্ত সমাজপ্রথাটিতে উদ্দেশ্য ভালো হলেও যে পদ্ধতিতে তা করা হয় এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মৌলিক কিছু আপত্তি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, সামাজিক এ প্রথার কারণে সকলেই তার কুরবানীর এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজের লোকদের হাতে দিতে বাধ্য থাকে। এবং এর বিলি-বণ্টন ও গ্রহীতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু সমাজপতিদেরই হাত থাকে। গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা শরীয়তসম্মত নয়। কেননা শরীয়তে কুরবানী ও গোশত বণ্টন একান্তই কুরবানীদাতার নিজস্ব কাজ। ঈদের দিন সম্মিলিতভাবে জামাতে নামায আদায় করতে বলা হলেও কুরবানীর জন্য কত মূল্যের পশু কিনবে, সে পশু কোথায় জবাই করবে, গোশত কীভাবে বণ্টন করবে—এ বিষয়গুলো কুরবানীদাতার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শরীয়তে কুরবানীর কিছু গোশত সদকা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃখীদের কুরবানীর গোশত দিতে তাকিদও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কুরবানীদাতার উপর অপরিহার্য করা হয়নি। বরং কুরবানীদাতা কী পরিমাণ গোশত নিজে রাখবে, কী পরিমাণ সদকা করবে এবং কাকে কাকে বিলি করবে আর কী পরিমাণ আগামীর জন্য সংরক্ষণ করবে— এগুলো কুরবানীদাতার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার এবং ব্যক্তিগতভাবে করার কাজ। এটিকে সামাজিক নিয়মে নিয়ে আসা ঠিক নয়। তাই শরীয়তের মাসআলা জানা না থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোশত বণ্টনের প্রশ্নোক্ত যে পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে, তা পরিহারযোগ্য। নিম্নে সংক্ষেপে প্রশ্নোক্ত প্রথাটির কিছু ক্ষতির দিক উল্লেখ করা হল— ১. অনেক কুরবানীদাতার পরিবারের সদস্য-সংখ্যা বেশি হওয়ায় অথবা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে নিজ পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখার প্রয়োজন হয়; ফলে সে পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখতে চায়। আবার অনেকে তার কোনো দরিদ্র আত্মীয়কে কুরবানীর গোশত দিতে চায়। কিন্তু সামাজিক এই বাধ্যবাধকতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সামাজিক রীতি অনুযায়ী কুরবানীর এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজে দিতে বাধ্য হয়। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— إِنَّهُ لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ. কোনো মুসলমানের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল নয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৬৯৫) ২. প্রশ্নোক্ত প্রথায় গোশতদাতা তার দানের অংশটি কাকে দেবে সে স্বাধীনতা হারায়। হয়তো সে তার নিকটাত্মীয় অথবা পরিচিত কাউকে একটু বেশি পরিমাণে দিত, কিন্তু এক্ষেত্রে তার জন্য এমনটি করার সুযোগ থাকে না। ৩. অনেক মানুষ এমন আছেন, যারা প্রত্যেকের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে চান না। আর শরীয়তও কাউকে সকলের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু সামাজিক এই রীতির কারণে গোশত গ্রহণকারী প্রত্যেকেই অন্য সকলের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বলাবাহুল্য এ ধরনের ঐচ্ছিক বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা মোটেই উচিত নয়। ৪. এ ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপের আরেকটি ক্ষতিকর দিক হল, সমাজের কিছু মানুষ এমন থাকে, যাদের আয় রোজগার হারাম পন্থায় হয়। সেক্ষেত্রে জেনে বুঝে তাদের কুরবানীর গোশত সমাজের সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়। অথচ হারাম উপার্জনের মাধ্যমে কুরবানীকৃত পশুর গোশত খাওয়া জায়েয নয়। মোটকথা, শরীয়তের শিক্ষা মোতাবেক প্রত্যেককে তার কুরবানীর অংশ দান করার বিষয়ে স্বাধীন রাখতে হবে। প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে বা অন্য কোনোভাবে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। কুরবানীদাতা নিজ দায়িত্ব ও বিবেচনা মতো যাকে যে পরিমাণ হাদিয়া করতে চায় করবে এবং গরীব-মিসকীনকে যে পরিমাণ সদকা করতে চায় করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে শত শত বছর যাবৎ এ পদ্ধতিই চলমান আছে। এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা জরুরি। শরীয়ত যা চালু করতে বলেনি এমন কোনো প্রথা চালু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭২; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮
বিস্তারিত পড়ুনসরকারি চাকরির বিধানঃ ৪র্থ ও শেষ পর্ব
২২ মে, ২০২৫
সাধারণ চাকুরিঃ খাদ্য মন্ত্রনালয়, বস্ত্র, পাট, ইত্যাদি তথা মন্ত্রনালয়ের যেসব পদগুলো সংবিধান - আইন প্রনয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় অনুরুপভাবে ডাক্তারি, শিক্ষকতা, ট্রাফিক পুলিশ, ঔষধ কোম্পানির চাকুরি, হসপিটালে ইত্যাদি। আমাদের সর্বশেষ আলোচ্য বিষয় হলো সাধারণ সরকারি চাকুরি। অর্থাৎ যেই চাকুরিগুলা পূর্বে অতিবাহিত হওয়া ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত নয় তথা রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন, কুফর প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা, খুন লুটপাটের সঙ্গে যেগুলা সম্পৃক্ত নয়ঃ এমন সরকারি চাকুরি নিয়েই মূলত আলোচনা হবে। আমরা আগেই বলেছি যেঃ সরকারি চাকরিসমূহ তিন ভাগে বিভক্তঃ ১. এমন চাকরি যেখানে সরকারের কুফরি কাজে অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা করতে হয়। এ ধরনের চাকরি করা কুফরি, যা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। ২. এমন চাকরি যেখানে কুফরি কাজ না করা লাগলেও হারাম কাজে অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা করতে হয়, এমন চাকরি করা হারাম। ৩. এমন চাকরি যেখানে কুফরি এবং হারাম কোনো কাজই করতে হয় না বরং কাজটি মৌলিকভাবে জায়েয। তাগুত সরকারের অধীনে এমন চাকরি থেকেও যথাসম্ভব বিরত থাকাই উত্তম; যদিও চাকরির কারণে কোনো নাজায়েয কাজ করতে না হয়। এসমস্ত সরকারি চাকুরিতে যোগদান করতে শরীয়তে মৌলিকভাবে বাধা নাই। এই চাকুরিগুলো সত্তাগতভাবে জায়েজ। ডাক্তারি করা, ঔষধ বিক্রি করা, ইমামতি করা; এসব কাজই ভালো কাজ সত্তাগত বিবেচনায়। কেউ যদি অসদুপায় অবলম্বন না করে হালালভাবে কাজগুলো করে তাহলে সেটা জায়েজ। তবে এই কাজগুলো অনৈসলামিক রাষ্ট্রে অথবা তাগুত সরকারের অধীনে না করে পারা গেলে সেটাই উত্তম। যথা সম্ভব সরকারের সম্পৃক্ততা থেকে বিরত থাকা উত্তম। তাছাড়া এসব সরকারি কাজের বেতনের বেশিরভাগই দেয়া হয় প্রজাদের থেকে জুলুম করে আদায় করা ট্যাক্স থেকে। আল্লামা আইনি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ বর্তমান যমানায় ট্যাক্স হল, জালেমরা যা নগর-বন্দরে আগমনকারী ব্যবসায়ী এবং বাজারে ক্রয়-বিক্রয়কারীদের থেকে উত্তোলন করে। ইসলামপূর্ব সময়ে এই ট্যাক্সের প্রচলন ছিল। ইসলাম তা বাতিল করে দেয় এবং শরয়ী বিধান অনুযায়ী যাকাত, উশর ও খারাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন জালেম শাসকরা ক্ষমতা দখল করে, তারা পুনরায় এ জুলুম শুরু করে। তারপর থেকেই জালেম ও ফাসেক মন্ত্রীরা এ ট্যাক্সের পরিমাণ নির্ধারণ করতে থাকে, তা বাড়াতে থাকে এবং তার অনেক শাখা প্রশাখা বের করতে থাকে। এমনকি পরিশেষে তারা ছোট-বড় সব কিছুতেই ট্যাক্স আরোপ করে। আর এর মাধ্যমে তারা নবীজির এ বাণীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, ‘যে আমাদের দ্বীনের মাঝে নতুন কোনো বিষয় উদ্ভাবন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (1) আমাদের শরীয়তে ট্যাক্স হারাম সম্পূর্ণ। ট্যাক্স গ্রহণ করে তাই জালেমের সহযোগী হওয়া যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ لا يدخُل الجنةَ صاحبُ مَكْسٍ”. رواه أبو داود (2937) “ট্যাক্স গ্রহণকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” -সুনানে আবু দাউদ :2937) এইজন্য এসমস্ত সরকারিভাবে চাকুরি থেকে বেঁচে থাকা উত্তম। তাগুতের অধীনে জায়েয কাজেও চাকরী না করা উত্তম, যদিও তাতে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক না থাকে। তাতে তাগুত বর্জন ও তাগুতের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ পূর্ণাঙ্গ হয়। আর যদি তা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাসহ হয়, বা অনিবার্যভাবে তা তাদের বন্ধুত্বের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে তা সম্পূর্ণই নাজায়েয। (2) বাহ্যদৃষ্টিতে এই ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে তো কোনো সমস্যা চোখে পড়ে না। কিন্তু গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রহ.-এর চিন্তাধারার সবচে নির্ভরযোগ্য ভাষ্যকার মাওলানা আবদুল বারি নদবি রহ. বলেনঃ তবে চাকরির ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে এতটুকু সতর্কতার নির্দেশনা রয়েছে যে, যদি জীবনযাপনের অন্য কোনো সুযোগ না থাকে, তাহলে (অপারগ হয়ে) শিক্ষা এবং এজাতীয় অন্যান্য ক্ষেত্র; যেগুলোতে আদালত ও এজাতীয় অন্যান্য দায়িত্বের পদগুলোর মতো স্পষ্টভাবে শরিয়াহর বিধিবিধানের বিরুদ্ধাচারণ করতে হয় না; বেছে নিয়ে এগুলোতে চাকরি করো। (3) এইজন্য শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. কাফির শাসকের অধীনে কাপড় সেলাই করা অথবা পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, এগুলো যদিও বাহ্যিকভাবে বৈধ; কিন্তু গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে প্রতিভাত হয়, এগুলো কোনোটাই হারাম থেকে মুক্ত নয়। অর্থাৎ এগুলো ধীরে ধীরে মানুষকে জুলুম, অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। এ প্রসঙ্গে তিনি তার ফাতওয়ার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, কারণগুলোও বিশ্লেষণসহকারে তুলে ধরেছেন। (4) যেখানে একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য হলো তাগুতকে উৎখাত করা, সেখানে তাদের মদদ করা তো কোনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না। মুসলমানদের মাথার ওপর জোরপূর্বক চেপে থাকা এসকল তাগুত নব্য ক্রুসেডার কুফফার গোষ্ঠীর তাবেদার পুতুল ছাড়া কিছু নয়। ঈমানের পরে মুসলিম উম্মাহর ওপর এসকল আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করার চাইতে বড় কোনো আবশ্যকীয় বিষয় নেই। (5) তবে মুলকথা হলোঃ এইসমস্ত পদে চাকুরি করে তার পারিশ্রমিক বা বেতন বৈধ আছে। তবে শর্ত হলো কোন হারাম কাজে সহযোগিতা বা অন্যায় কাজে সমর্থন জানানো যাবে না। অন্যায়ভাবে উপার্জন করা যাবে না। বেপর্দায় থাকা যাবে না। যদি কেউ জুলুম করে, ফাঁকি দেয় কাজে, অতিরিক্ত দাম রাখে, বেপর্দায় থাকে, ফ্রি মিক্সিংয়ে চলে; তাহলে এইভাবে তাদের জন্য বেতন হালাল হলেও তাদের গুনাহের উপর অটল থেকে কাজ করা অবৈধ। (6) যেমনটা বলেছেন মাওলানা আবদুল হাই ফিরিঙ্গি মহল্লি রহ. বৈধ চাকরি ও অবৈধ চাকরির পরিচয় প্রসঙ্গে লেখেনঃ جس نوکری میں اجراۓ احکام غیر شرعیہ کی اور اجراۓ احکام ظلم وغیرہ کی نہ ہو وہ درست ہے اور جن میں یہ امور ہوں وہ حرام ہے۔ যে চাকরিতে শরিয়াহবহির্ভূত বিধিবিধান বাস্তবায়ন এবং জুলুম ও এজাতীয় অন্যান্য বিষয়ের বিধিবিধান প্রয়োগ করতে হয়, তা নাজায়িয। আর যে চাকরিতে এই সমস্যাগুলো থাকবে না, তা জায়িয। (7) রেফারেন্সঃ (1) المكس في هذا الزمان: ما يأخذه الظلمة والأعوان من التجار الواردين في البلاد ومن الباعة والشراة في الأسواق بأشياء مقررة عليهم على طريق الظلم والعدوان، وكان هذا قبل الإِسلام في الجاهلية، ثم لما جاء الشرع أبطل هذا وأمرهم أن يؤدوا الزكوات والعشور والخراج على الأوضاع الشرعية، ثم لما استولت الظلمة من الملوك والخونة من الحكام أعادوا هذا الظلم، ثم لم يزل الوزراء الظلمة الفسقة يحددون ذلك ويزيدون عليه ويفرعون تفريعات حتى وضعوه في كل شيء جليل وحقير، ودخلوا تحت قوله – عليه السلام -: “من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فليس منا”. (نخب الأفكار 8/ 113) (2) لَّا یَتَّخِذِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡكَـٰفِرِینَ أَوۡلِیَاۤءَ مِن دُونِ ٱلۡمُؤۡمِنِینَۖ وَمَن یَفۡعَلۡ ذَ ٰلِكَ فَلَیۡسَ مِنَ ٱللَّهِ فِی شَیۡءٍ إِلَّاۤ أَن تَتَّقُوا۟ مِنۡهُمۡ تُقَىٰةࣰۗ وَیُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفۡسَهُۥۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلۡمَصِیرُ ( سورة ال عمران: ٢٨) (3) البتہ نوکریوں میں کم از کم اتنی احتیاط کی ھدایت ہے کہ اگر کوئئ اور صورت معاش کا نھیں تو تعلیمات وغیرہ کی ویسی نوکریاں کرو جن میں عدالتی عہدوں وغیرہ کی طرح شریعت کے احکام کی صراحتًا مخالفت نہ کرنا پڑے. ( মাসিক মাআরিফ, জানুয়ারি, ১৯৪৭) (4) ফতোয়া আজিযি: ৪১৬ পৃষ্ঠা (5) عن ابي بكر قال: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ " ( صحيح البخاري: 49) قال القاضي عياض رحمه الله : هذا الحديث أصل في صفة التغيير ، فحق المغير أن يغيره بكل وجه أمكنه زواله به قولا كان أو فعلا ؛ فيكسر آلات الباطل ، ويريق المسكر بنفسه ، أو يأمر من يفعله ، وينزع الغصوب ويردها إلى أصحابها بنفسه ، أو بأمره إذا أمكنه ويرفق في التغيير جهده بالجاهل وبذي العزة الظالم المخوف شره ؛ إذ ذلك أدعى إلى قبول قوله . كما يستحب أن يكون متولي ذلك من أهل الصلاح والفضل لهذا المعنى . ويغلظ على المتمادي في غيه ، والمسرف في بطالته ؛ إذا أمن أن يؤثر إغلاظه منكرا أشد مما غيره لكون جانبه محميا عن سطوة الظالم . فإن غلب على ظنه أن تغييره بيده يسبب منكرا أشد منه من قتله أو قتل غيره بسبب كف يده ، واقتصر على القول باللسان والوعظ والتخويف . فإن خاف أن يسبب قوله مثل ذلك غير بقلبه ، وكان في سعة ، وهذا هو المراد بالحديث إن شاء الله تعالى (فتح الباري: ١٢/٢) (6) وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الإثْمِ وَالْعُدْوَانِ ) يأمر تعالى عباده المؤمنين بالمعاونة على فعل الخيرات ، وهو البر ، وترك المنكرات ، وهو التقوى ، وينهاهم عن التناصر على الباطل ، والتعاون على المآثم ، والمحارم . "( تفسير ابن كثير :2 / 12-13) (7) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15) আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন। সমাপ্ত।
বিস্তারিত পড়ুনসাম্প্রতিক প্রবন্ধ
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত