বর্তমান সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিটকয়েনের মতই আরো দুটি জনপ্রিয় লেনদেন হচ্ছে বাইনারি ট্রেডিং এবং ফরেক্স ট্রেডিং। অনলাইন ভিত্তিক এই লেনদেন অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত, যে কোন লেনদেন করার পূর্বে বা কোন কাজ করার পূর্বে তার ব্যাপারে শরয়ী অবস্থান এবং বিধান কেমন, সেটা জেনে নেয়া উচিত সবার পূর্বে। এই প্রবন্ধে ইনশাআল্লাহ আমরা বাইনারি ট্রেডিং এবং ফরেক্স ট্রেডিংয়ের বিস্তারিত বিধান আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। প্রথমেই বাইনারি ট্রেডিং নিয়ে আলোচনা করব।
পরিচয়ঃ বাইনারি ট্রেডিং এটি মুলত একপ্রকার মার্কেট এ্যানালাইসিস। অর্থাৎ অনলাইনে বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ার তথা কারেন্সি কোম্পানি থাকে। কারেন্সি পেয়ারগুলো মুলত একটি ব্যাবসায়িক ইনভেস্ট বা এন্ট্রির মত। যেখানে কারেন্সিতে মানুষ এন্ট্রি নেয়। আরো সহজে বলি। অনলাইনে যেই বেট বা জুয়া সাইট আছে, সেখানে নির্দিষ্ট জিনিস বা বিষয়ের উপর মানুষ বাজি ধরে, বাজি ধরার আগে সে ঐ সাইটের পূর্ব-পর মোটামুটি যাচাই করে নেয় যে বাজি ধরাটা কেমন হতে পারে, কিভাবে কত দামে বাজি ধরবে।
কারেন্সি পেয়ার (Currency Pair) হলো ফরেক্স (Foreign Exchange) মার্কেটে দুটি মুদ্রার তুলনামূলক মান। এটি বোঝায়, একটি মুদ্রার দাম অন্য মুদ্রার সঙ্গে কতটা। ধরুন, EUR/USD = 1.10, EUR (ইউরো)ঃ এটি হলো বেস কারেন্সি। এর অর্থ, আপনি মূলত "ইউরো" কিনছেন বা বিক্রি করছেন। USD (মার্কিন ডলার)ঃ এটি হলো কোট কারেন্সি। এর মানে, ১ ইউরো কেনার জন্য ১.১০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। আপনি যদি মনে করেন ইউরো শক্তিশালী হবে বা তার দাম বাড়বে, তাহলে আপনি EUR/USD বাই করবেন। আপনি যদি মনে করেন ইউরো দুর্বল হবে বা তার দাম কমবে, তাহলে আপনি EUR/USD সেল করবেন। একটি কারেন্সি পেয়ার দুইটি মুদ্রার সমন্বয়ে তৈরি হয়। প্রথম মুদ্রাটি বেস কারেন্সি। দ্বিতীয় মুদ্রাটি কোট কারেন্সি। কারেন্সি পেয়ার মানে কি অনেকেই জানে না।
আপনি বিদেশ ভ্রমণে যাবেন এবং ডলার কিনতে চান। যদি ১ USD = ১০০ BDT হয়, এর অর্থ হলো ১ মার্কিন ডলার কেনার জন্য ১০০ বাংলাদেশি টাকা প্রয়োজন এটিই একটি কারেন্সি পেয়ার।
তো বাইনারি ট্রেডিংয়ে যেকোনো কারেন্সি পেয়ারে এন্ট্রি নেয়ার সময় একজন ট্রেডার ওই কারেন্সি পেয়ারটির বর্তমান অবস্থান, পূর্বের অবস্থান ভালো করে যাচাই-বাছাই করে তারপর এন্ট্রি গ্রহন করে থাকেন। এই যাচাই-বাছাই করাকে ট্রেড এর ভাষায় বলা হয় “ট্রেডিং এনালাইসিস” । অর্থাৎ, কারেন্সি পেয়ারটির প্রাইস কোনদিকে যাবে সেটি আপনি নিজে ভালো করে বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত হিসাবে এন্ট্রি নিচ্ছেন BUY কিংবা SELL এবং সেই সাথে আপনি এটাও ধারনা করে নিচ্ছেন এই কারেন্সি পেয়ারটির সম্ভাব্য মুভমেন্ট কোনদিকে হতে পারে।
ট্রেডিং তথা কোন বস্তুর অনুমান ভিত্তিক দর নির্ধারণ করার জন্য এখানে নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়। ঐসময়ের মধ্যেই আপনাকে আপনার কারেন্সি পেয়ারের প্রাইস অনুমান করে ট্রেড করতে হবে। বাইনারি ট্রেডের মুলমন্ত্র হচ্ছে মার্কেট প্রাইসের ফাস্ট মুভমেন্ট। এখানে ট্রেডাররা বেশিরভাগ 30 সেকেন্ড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ 5 মিনিট পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে তারা তাদের মার্কেট প্রাইস একশনের আনুমানিক গতিবিধি লক্ষ্য করে ট্রেড কোট করে থাকেন। ওই সময়ের মধ্যে অনুমান সঠিক হলে প্রফিট এবং ভুল হলে লস হয়ে থাকে। যার মানে হচ্ছে, আপনি যদি 2 মিনিটের জন্য কোনও ট্রেড দিয়ে থাকেন তাহলে ঠিক 2 মিনিট পরই সেটা ক্লোজ হয়ে যাবে। আপনার প্রফিট হোক কিংবা আপনার লসই হোক।
উদাহরণস্বরুপ কোন ব্যক্তি কোন স্বর্ণের ব্যাপারে বাজি ধরবে। এখন সেই ব্যক্তি কোনও সোনা সম্পর্কে ট্রেড করার জন্য পূর্বাভাস বা তার অনুমান পেশ করেন যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার দাম কত হবে। এই পূর্বাভাস দেওয়ার অধিকার বা টিকিট একটি নির্দিষ্ট অর্থ (যেমন ৪৪ ডলার) দিয়ে কিনতে হয়। যদি তার পূর্বাভাস সেই নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক হয়, তবে তাকে নির্ধারিত বাইনারি পুরস্কার (যেমন ১০০ ডলার) দেওয়া হবে, যার মধ্যে তার টিকিটের খরচ (যেমন ৪৪ ডলার) কেটে বাকী ৫৬ ডলার তার লাভ হবে। আর যদি তার পূর্বাভাস ভুল হয়, তবে টিকিটের মূল্য (যেমন ৪৪ ডলার) হারিয়ে যাবে। অর্থাৎ বাইনারি ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি ট্রেডের জন্য কোট করে থাকেন, যদি তার প্রাইসের অনুমান সঠিক না হয় তাহলে ঠিক ওই পরিমাণ অর্থই আপনার লস হবে।
এই ছিলো বাইনারি ট্রেডিংয়ের পরিচয় প্রকৃতি। পরবর্তী পর্বে শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে এটার বৈধতা কতটুকু পরবর্তী পর্বে সেটা নিয়ে আলোচনা করব আমরা ইনশাআল্লাহ।