২০১৮ সালে একবার তাবলীগ সফরে গিয়েছিলাম। গ্রামের নাম মনে আসছে না। সেখানে অনেক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিলো বেশ আন্তরিকভাবেই। দ্বীন শিখতে চাইত তারা। সবকিছু খোজ নেয়ার পর তাদের জীবিকা কিভাবে নির্বাহ হয় সেটা জানার চেস্টা করলাম। সবাই বলতে গেলে কৃষি কাজ করে।
পরে একজন ভাই বললেন আমরা তো সবাই কৃষি কাজ করি, জমি বর্গা নেই আর বন্ধকী জমি রেখে চলি। আমি বললাম বন্ধকী জমি তো রিস্ক, শরীয়তের অনেক বিধি-নিষেধ আছে সে ব্যাপারে। তখন তিনি বললেন হযরতঃ আমরা কট রাখি! বললাম কট কি জিনিস? তখন তিনি বললেনঃ জমি বন্ধক রাখার যে পদ্ধতি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সেটা হলো বন্ধকদাতা বন্ধক গ্রহীতার নিকট থেকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে আর বন্ধকগ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকে। যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন জমি হস্তান্তর করে। এটাকে কোথাও কোথাও কট রাখাও বলা হয়।
এছাড়াও তিনি আরো একটি পদ্ধতির কথা বললেন যেঃ আরেকটি পদ্ধতিতে আমাদের এখানে জমি বন্ধক রাখা হয় ৷ এটিও উপরের মতোই। তবে পার্থক্য হল, এক্ষেত্রে যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন বছর হিসাব করে বন্ধকগ্রহীতা কিছু টাকা কম নেয়। যেমন-কেউ এক কাঠা জমি বন্ধক নিল দশ হাজার টাকায় এবং সে দু বছর এ জমি ভোগ করে। দু বছর পর টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় পাঁচশ টাকা করে এক হাজার টাকা কম নেয়। কেউ কেউ মাসে মাসে ১০০ টাকা করে ভাড়া প্রদান করে! অথবা কেউ কেউ জামানত হিসেবে ৩/৪ লাখ টাকাও রাখে, জমিদাতাকে বাৎসরিক ভাড়াও প্রদান করে, তবে পরবর্তীতে ঐ জামানতের টাকা ফিরিয়ে নেয় আবার!
আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বস্তুত এই জাতীয় লেনদেনই চলছে সমাজে।
এক্ষেত্রে মুল মাসআলা হলোঃ ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। প্রথম পদ্ধতিটি নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট।
আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। এখন জমিদাতা ঐ টাকা ব্যবহার করলে তা সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সুতরাং দুটি কারবারই নাজায়েয।
অবশ্য বৈধভাবে করার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করবে। এক্ষেত্রে জমির মালিক জমি ভাড়া দিবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৮ হাজার টাকা। মালিকের ৩২ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৪ বছরের জন্য জমি ভাড়া দিবে।
এক্ষেত্রে অগ্রিম ৩২ হাজার টাকা নিয়ে নিবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে।
শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল আসল ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৪৬৮
উনাকে বিস্তারিত বিষয়টি বুঝালে অনেক আফসোস করেন। পরে মজলিসে বিস্তারিত আলোচনা করি। গ্রামবাসী সবাই বলেন যে আমরা সামনে থেকে বাদ দিব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তৌফিক দিন আমাদেরকেও।