Logoশরয়ী সমাধান
Cover image

প্রবন্ধ

বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ তৃতীয় পর্ব

Hm Sulayman

১৬ এপ্রিল, ২০২৫

Share Copy Link

বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ দ্বিতীয় পর্বে বিটকয়েন কেন মুদ্রা নয়, কি কি অসঙ্গতি রয়েছে সেসব বিষয়গুলি তুলে ধরেছি। প্রথম বিষয় হচ্ছে - ফুক্বাহায়ে কেরাম মুদ্রা গণ্য হওয়ার জন্য কিছু শর্ত করেন। তারমধ্যে যেমন - জনসাধারণের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর প্রচলন শুরু হবে। অর্থাৎ এটির ব্যাপক প্রচলন হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সেটির বৈধতা থাকার কারণে। খোদ রাষ্ট্রই কোন বস্তুকে মুদ্রার জন্য আখ্যায়িত করবে। যেমন আমাদের দেশে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকাকে মুদ্রা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর মুদ্রা বা টাকা হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য এটা অন্যতম শর্ত। এই জন্য হানাফি মাজহাবের এ্যানাসাইক্লোপিডিয়া খ্যাত কিতাব "আল হিদায়া" গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে এই বিষয়ে বলা হয়েছেঃ

قوله: ويجوز بيع الفلس بالفلسين باعيانهما عند أبى حنيفة وابى يوسف وقال محمد لا يجوز لأن الثمنية ثبت باصطلاح الكل... بخلاف النقود لأنها للثمنية خلقة

অর্থাৎ মুদ্রা পরিগনিত হবে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচলন এবং স্বীকৃতির মাধ্যমে। এটা ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ এর মত। (আল হিদায়া : ৮১/৩) উল্লেখিত শর্তাবলির কোনটিই পাওয়া যায় না এখানে। তাই এটি মুদ্রাই নয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে - এছাড়াও যেটি মুদ্রা হবে, তার অন্যতম একটি বিষয় হলো সেটি মৌলিকভাবে ধোঁকা, প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকবে, কোন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে না। কিন্তু বিটকয়েন এটি জুয়ার মতই এবং ধোঁকা খাওয়া প্রতারিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি রাতারাতি পরিবর্তন হয়,দাম আকাশছোয়া হয়, আবার কমে যায়, এবং এই কয়েন অনেক সময় হ্যাক হয়ে যায়। অথচ এরকম লেনদেন মানব জীবনে বড় বিপর্যয়ের কারণ।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

قال اللّٰہ تعالی: یٰأیھا الذین آمنوا إنما الخمر والمیسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشیطن فاجتنبوہ لعلکم تفلحون ( المائدة، ۹۰)

“হে বিশ্বাসীরা! নিঃসন্দেহে মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা এবং ভাগ্য নির্ধারণের তাস-প্রথা শয়তানের কাজ; সুতরাং এগুলি থেকে দূরে থাকো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সুরা মায়েদা: ৯০)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

﴿وَلَا تَأْکُلُوْا أَمْوَالَکُمْ بَیْنَکُمْ بِالْبَاطِلِ﴾ أي بالحرام، یعني بالربا، والقمار، والغصب والسرقة (معالم التنزیل ۲: ۵۰)

“আর নিজেদের মধ্যে অগ্রহণযোগ্য উপায়ে (অর্থাৎ হারাম উপায়ে) তোমাদের সম্পদ খাবে না।” অর্থাৎ সুদ, জুয়া, দখল ও চুরি। (মাআলিমুত তানযিল : ৫০/২)

জুয়ার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লামা শামি রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ

، لأن القمار من القمر الذي یزداد تارةً وینقص أخریٰ۔ وسمی القمار قمارًا؛ لأن کل واحد من المقامرین ممن یجوز أن یذہب مالہ إلی صاحبہ، ویجوز أن یستفید مال صاحبہ، وہو حرام بالنص (رد المحتار، کتاب الحظر والإباحة، باب الاستبراء، فصل في البیع، ۹: ۵۷۷، ط: مکتبة زکریا)

কারণ জুয়া এমন একটি বিষয়, যা একবার বাড়ে, একবার কমে। জুয়াকে জুয়া বলা হয়; কারণ প্রতিটি জুয়াড়ির জন্য অনুমোদিত যে তার সম্পদ অন্যের কাছে চলে যেতে পারে এবং অন্যের সম্পদ থেকে লাভ গ্রহণ করা যেতে পারে। এবং এটি স্পষ্টতই হারাম। (রদ্দুল মুহতার: ৫৭৭/৯)

তৃতীয় আরেকটি বিষয় হলো - বিটকয়েনকে যদি মুদ্রা ধরেও নিই (যদিও এটি মুদ্রা নয়) এবং টাকার বিনিময়ে যদি এটাকে ক্রয় করতে হয়, তাহলে এটি শরয়ী পরিভাষায় "বাইয়ুস সারফ" তথা যে চুক্তিতে উভয় পক্ষেই মুদ্রা-দ্রব্য থাকে। এখন যদি বিটকয়েনকে বিটকয়েনের মোকাবেলায় বিক্রি করা হয় তাহলে সেখানে মজলিসেই উভয় পক্ষেরই তা হস্তগত করা আবশ্যক। যেমনটা হেদায়ার মধ্যে এসেছেঃ

قوله: وعقد الصرف ما وقع على جنس الاثمان يعتبر فيه قبض العوضيه فى المجلس ....وما سواه مما فيه الربوا يعتبر فيه التعيين ولا يعتبر فيه التقابض

"বাইয়ুস সারফের মধ্যে চুক্তির মজলিসেই হস্তগত করা আবশ্যক" (হেদায়া : ৮০/৩)

আর বিটকয়েনকে ভিন্ন দেশের কারেন্সির বিনিময়ে বিক্রি করলে মাসআলা হলো: এক দেশের কারেন্সি আরেক দেশের কারেন্সির বিনিময়ে কম-বেশি করে বিক্রি করা জায়েজ আছে। তবে সেক্ষেত্রেও বৈঠকেই কমপক্ষে একপক্ষকে টাকাটি হস্তগত করে নিতে হবে। যদি একজনও তাদের বিনিময়কৃত কারেন্সি হস্তগত না করে, তাহলে ক্রয়-বিক্রয়টি জায়েজ হবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়িল: ৪/২৮; জাদিদ মুআমালাত কে শরয়ি আহকাম: ১-১৩৯) কিন্তু সেটা বিটকয়েনে পাওয়া যায় না।

এছাড়াও বিটকয়েন কখনোই স্বর্ণ রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত নয়, যেমনটা প্রচলিত টাকা পয়সা। বিটকয়েনের ট্রানজেকশন, লেনদেন সবকিছুই অজ্ঞাত, এটি সহজলভ্য নয়,সব মানুষ এটা ব্যাবহার করতে পারে না, যেটা শরয়ী কারেন্সি নীতি বহির্ভূত বিষয়। তাছাড়া এটি অজ্ঞাত এবং এর পরিচালক জানা যায় না, তাই মানুষের সম্পদ সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যেই থাকে, যা শরীয়তে নিষেধ। যেহেতু এই মুদ্রা শুধু মাত্র ইলেক্ট্রোনিক্যালি জমা থাকে, তাই আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটিং ডিভাইজ যদি ক্র্যাশ হয়ে যায় কিংবা আপনি যদি অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড ভুলে যান তবে, আপনার সকল কয়েন গায়েব হয়ে যাবে। এবং আপনি কখনোই এই কয়েন গুলো রিকভার করতে পারবেন না। বিটকয়েন লেনদেন পুনরাবৃত্তি না করতে না পারা, সেবা গ্রহিতা সংশ্লিষ্ট সেবা না পেলে, মুদ্রা ফেরত পাওয়ার কোন উপায় নেই।

Share Copy Link

মন্তব্য

সকল প্রসঙ্গ

© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Facebook Group