

প্রবন্ধ
সরকারি চাকরির বিধানঃ ১ম পর্ব
১১ মে, ২০২৫
আমাদের কাছে প্রায়ই একটি প্রশ্ন এসে থাকে যেঃ সরকারি চাকরির বিধান কি? অর্থাৎ সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করা যেমন ওকালতি করা, ব্যারিস্টার হওয়া, পুলিশ বিভাগের চাকরি করা, সামরিক বিভাগের চাকরি করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের চাকরি করা। মোটকথা কোন ব্যক্তি যদি সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করে তাহলে ওই চাকরি করা তার জন্য জায়েজ হবে নাকি জায়েজ হবে না! এবং তার বেতন হালাল নাকি হারাম? আল্লাহ চাইলে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এই আর্টিকেল পড়ার আগে আমরা একটা মূলনীতি মাথায় রাখি যে, আমাদের আলোচ্য বিষয় হল এমন রাষ্ট্রের সরকারি পদে চাকরি করা নিয়েঃ যে রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্র নয় তথা রাষ্ট্রপ্রধান বাস্তবিক পক্ষে মুসলমান নয় এবং সেই দেশ ইসলামী আইন অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে না। সেই দেশের সরকারি চাকরি নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আলোচনা করব নতুবা ইসলামের রাষ্ট্রে সরকারি পদে চাকরি করতে কোন বাধা নেই। ভূমিকাঃ এজন্য সবার আগে আমাদেরকে জানতে হবে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামের রাষ্ট্র কোনটি এবং কুফরি রাষ্ট্র কোনটি! মুলত কোন দেশ দারুল ইসলাম নাকি দারুল হারব তথা দারুল কুফর হওয়া বা না হওয়ার মৌলিক প্রধান মাপকাঠি হলোঃ ঐ দেশ বা ভূখণ্ডে বাস্তবায়িত প্রচলিত আইন এবং সংবিধান। তাই কোন দেশ যদি ইসলামী নীতিমালা এবং শরয়ী আইন অনুযায়ী চলে, তাহলে সেটি দারুল ইসলাম তথা ইসলামি রাষ্ট্র বলে গণ্য হবে। যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী অথবা অধিকাংশ অমুসলিম অল্পকিছু মুসলিম। জনসংখ্যার কমবেশি এটা কোন প্রভাব ফেলবে না। সেটি ইসলামি রাষ্ট্র বলেই গণ্য হবে। আর যদি কুফুরি আইন এবং সংবিধানে দেশ পরিচালিত হয়, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো যদি কুফুরি নীতিমালার আলোকে গৃহীত হয় তাহলে সেটি দারুল হারব তথা দারুল কুফর; কাফের রাষ্ট্র! যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী হোক, এসবে কোন প্রভাব ফেলবে না। এটিই হানাফি মাজহাবসহ বাকি ইমামদের ফতোয়া। যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ আরো অতিরিক্ত দুটি শর্ত করেছেন। কিন্তু ফতোয়া সাহেবাইনের উপর। ইমাম জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ حُكْمُ الدَّارِ إِنَّمَا يَتَعَلَّقُ بِالظُّهُوْرِ وَالْغَلَبَةِ، وَإِجْرَاءِ حُكْمِ الدِّيْنِ بِهَا، وَالدَّلِيْلُ عَلَى صِحَّةِ ذَلِكَ: أَنَّا مَتَى غَلَبْنَا عَلَى دَارِ الْحَرْبِ، وَأَجْرَيْنَا أَحْكَامَنَا فِيْهَا: صَارَتْ دَارَ الْإِسْلَامِ، سَوَاءٌ كَانَتْ مُتَاخِمَةً لِدَارِ الْإِسْلَامِ أَوْ لَمْ تَكُنْ، فَكَذَلِكَ الْبَلَدُ مِنْ دَارْ الْإِسْلَامْ، إِذَا غَلَبَ عَلَيْهِ أَهْلُ الْكُفْرِ، وَجَرَى فِيْهِ حُكْمُهُمْ: وَوَجَبَ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْحَرْبِ. وَلَا مَعْنَى لِاِعْتِبَارِ بَقَاءِ ذِمِّيٍّ أَوْ مُسْلِمٍ آَمِنًا عَلَى نَفْسِهِ؛ لِأَنَّ الْمُسْلِمَ قَدْ يَأْمَنُ فِيْ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يَسْلِبُهُ ذَلِكَ حُكْمَ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يُوْجِبُ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْإِسْلَامِ. ‘ কোন দেশের হুকুম বা বিধান এটি বিজয়, কর্তৃত্ব ও কোনো ধর্মের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সাথে সম্পর্কিত। এ দাবির পক্ষে দলিল হলো, আমরা যখন “দারুল হারব” এর ওপর বিজয়ী হই এবং তথায় আমাদের শাসনব্যবস্থা চালু করি, তখন সেটা “দারুল ইসলাম” হয়ে যায়; চাই সে রাষ্ট্রটি কোনো “দারুল ইসলাম” এর সংলগ্ন হোক বা না হোক। তাহলে অনুরূপ “দারুল ইসলাম”-এর কোনো শহরের ওপর যখন কাফিররা বিজয়ী হবে এবং তথায় তাদের কুফরি শাসনব্যবস্থা চালু হবে, তাহলে সেটা অবশ্যই “দারুল হারব”-এ পরিণত হয়ে যাবে। মুসলিম ও জিম্মিদের পূর্বের নিরাপত্তাচুক্তিতে তাদের নিরাপদ থাকাকে বিবেচনা করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই। কেননা, মুসলমানও তো কখনও কখনও “দারুল হারব”-এ নিরাপদ থাকে; অথচ এর কারণে এটা রাষ্ট্রকে “দারুল হারব” হওয়া থেকে বের করে দেয় না এবং “দারুল ইসলাম”-এ রূপান্তরিত হয়ে যাওয়াকে আবশ্যক করে না।’ (শারহু মুখতাসারিত তাহাবি : ৭/২১৬-২১৭, প্রকাশনী : দারুল বাশাইরিল ইসলামিয়্যা, বৈরুত) ২. ইমাম সারাখসি রহ. স্বীয় ‘মাবসুত’-এ সাহিবাইনের-এর পক্ষ থেকে দলিল দিয়ে বলেনঃ الْبُقْعَة إنَّمَا تُنْسَبُ إلَيْنَا أَوْ إلَيْهِمْ بِاعْتِبَارِ الْقُوَّةِ وَالْغَلَبَةِ، فَكُلُّ مَوْضِعٍ ظَهَرَ فِيهِ حُكْمُ الشِّرْكِ فَالْقُوَّةُ فِي ذَلِكَ الْمَوْضِعِ لِلْمُشْرِكِينَ فَكَانَتْ دَارَ حَرْبٍ، وَكُلُّ مَوْضِعٍ كَانَ الظَّاهِرُ فِيهِ حُكْمُ الْإِسْلَامِ فَالْقُوَّةُ فِيهِ لِلْمُسْلِمِينَ. ‘স্থান আমাদের (মুসলমানদের) সাথে বা তাদের (কাফিরদের) সাথে সম্পৃক্ত হয় শক্তি ও বিজয়ের ভিত্তিতে। অতএব, যে জায়গায় শিরকের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুশরিকদের শক্তি বিজয়ী; বিধায় সেটা হবে “দারুল হারব”। আর যে জায়গায় ইসলামের সংবিধান বিজয়ী থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুসলমানদের শক্তি বিজয়ী।’ (আল-মাবসুত, সারাখসি : ১০/১১৪, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত) অনেকের সন্দেহ হতে পারে যে, তাহলে অনেক দেশে দেখা যায় অর্থাৎ অনেক রাষ্ট্রে দেখা যায়, যেই রাষ্ট্রের সংবিধান কুফুরী নীতিমালা ( যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র) অনুযায়ী পরিচালিত হয় সেখানে মুসলমানরা ঈদের নামাজ জুমার নামাজ সহ তারা তাদের দৈনন্দিন আমলী জিন্দেগী পালন করতে পারে; তাহলে সেটা কিভাবে কাফের রাষ্ট্র হতে পারে সেটা তো ইসলামের রাষ্ট্র হওয়ার কথা। একথা বুঝতে হবে যে ব্যক্তিগত সামান্য কিছু ইবাদত পালন করার সুযোগ পাওয়ার দ্বারাই কোন দেশ দারুল ইসলাম হয়ে যায় না। ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যায় না। বরং দেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধান এবং নিয়ম-নীতি সম্পূর্ণ ইসলামী হওয়াটা আবশ্যক। হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহি রাহিমাহুল্লাহ তিনি বলেনঃ ইসলামী রাষ্ট্র এবং কুফুরি রাষ্ট্রের মাসআলা যখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এখন নিজেই হিন্দুস্তানের ব্যাপারে চিন্তা করে দেখুন! এখানে খ্রিস্টান কাফেরদের আইন-কানুন কিভাবে শক্তি ও কর্তৃত্বের সঙ্গে জারি আছে! একজন সাধারন ডেপুটি কমিশনারও যদি আদেশ করে যে মসজিদে জামাত করোনা, তাহলে ধনী গরিব কেউই আদায় করে দেখাতে সক্ষম নয়। আর এই যে জুমা, দুই ঈদ ও কিছু ফিকহি মাসআলা অনুযায়ী আমল চলছে তা শুধুমাত্র তাদের আইনের কারণে। তারা প্রজাদের জন্য ফরমান জারি করেছে যে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী চলবে, সরকার তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। (তালিফাতে রশিদিয়া: পৃষ্ঠাঃ ৬৬৭ ) এজন্য সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহিমাহুল্লাহ তিনি বলেন যেঃ হিন্দুস্তান দারুল হারব এবং তা ততদিন পর্যন্ত দারুল হারব হিসেবে পরিগণিত হবে, যতদিন তাতে কুফুরের কর্তৃত্ব বিদ্যমান থাকবে। আর দারুল হারবের যত ধরনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং যত শর্তের কথা বলা হয়ঃ সবগুলোই এই হিন্দুস্থানে বিদ্যমান। ( মাকতুবাতে শাইখুল ইসলামঃ ২/১১৫) এইজন্য শুধু ৭০% অথবা ৯০% মুসলিম দেখলেই এটা ভেবে বসার অবকাশ নেই যে সেটি ইসলামী রাষ্ট্র! রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করলেও দেশ যদি কুফুরি সংবিধান অনুযায়ী চলে তাহলে মাজহাবের ইমামগনের মতে সেটি দারুল হারব বলেই বিবেচিত হবে। আর আমাদের আলোচ্য মাসআলাও দারুল হারবকে কেন্দ্র করে। কেননা স্বাভাবিকভাবেই দারুল ইসলামে সরকারি চাকুরি করা জায়েজ। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রে সরকারি পদ কোন অবৈধ কাজের জন্য নয়। নোটঃ বারবার পড়ুন। আয়ত্ব করুন। মাসআলা বুঝার জন্য এটি খুবই জরুরী।
বিস্তারিত পড়ুনসাম্প্রতিক প্রবন্ধ
Hm Sulayman - ১৫ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ৯ মে, ২০২৫
সকল প্রসঙ্গ
২৭তম রজনী
অনলাইন কোর্স
অলিম্পিক
আংটি
আধুনিক মাসআলা
আধুনিক মাসাআলা
উম্মুল মু'মিনিন
ওকালতি
কাফফারা
কাযা
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস
ক্রিকেট
ক্রিপ্টোকারেন্সি
ক্র্যাকড
খেলাধুলা
খেলাধুলা হতে উপার্জন
জর্দা
ডাক্তারি বিদ্যা
ডিফেন্স ফোর্স
তামাক
তারাবীহ
তালাক
দোআ
দোয়া
নবীজি
নবুয়তের সিলমোহর
নেশা
নৌবাহিনী
পাইরেটেড
পার্লামেন্ট সদস্য
পুলিশ
পেইড কোর্স
ফিদিয়া
ফুটবল
বিচারপতি
বিটকয়েন
বিড়ি
বিডিআর
ব্যবসায়
ব্যাডমিন্টন
ব্যারিস্টার
মদ
মাকরুহ
মুনাজাত
মেডিকেল
যাকাত
যাকাত-ফিতরা
রাস্তায় পাওয়া জিনিস
রোজা
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজার মাসআলা
রোজার মাসাআলা
রোযা ভঙ্গের কারণ
র্যাব
লাইলাতুল ক্বদর
লাইলাতুল বারাআত
শবে ক্বদর
শবে বরাত
শিক্ষক
সফটওয়্যার
সংবিধান
সরকারি চাকরি
সহশিক্ষা
সামরিক বাহিনী
সিগারেট
সেনাবাহিনী
স্ত্রী
© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত