এখন টেলিগ্রাম এবং গুগলে প্রচুর ফ্রি আনপেইড কোর্স পাওয়া যায়, অনুরুপভাবে প্রচুর পরিমানে ক্র্যাকড বা প্রিমিয়াম সফটওয়্যার ফ্রি ফ্রি পাওয়া যায়। তদ্রুপ ফ্রি ফ্রি পিডিএফ ফাইল পাওয়া যায়। সবাই এগুলো কমবেশি ব্যাবহার করে। এগুলা ব্যবহারের কিছু ধরন আছে।
(ক) কোর্সগুলো নিজে পড়ে। অন্যকে শেয়ার করে না। সফটওয়্যার নিজে ব্যবহার করে, অন্যকে দেয় না। পিডিএফ নিজে পড়ে, অন্যকে দেয় না।
(খ) কোর্সগুলো নিজে পড়ে, অন্যকেও শেয়ার করে, সফটওয়্যার নিজে চালায়, অন্যকেও দেয়, পিডিএফ নিজে পড়ে, অন্যকেও দেয়, তবে এসবের কোনটা বিক্রি করে না।
(গ) উপরোক্ত সব জিনিসগুলি বানিজ্যিকভাবে কেউ ব্যবহার করছে, বিক্রি করছে।
বিধানগুলির উপর এবার আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম পয়েন্ট "ক" এর উপর কথাঃ
(১) টেলিগ্রামের ফ্রি কোর্সগুলোর অনেকগুলো এমন আছে যা কোন প্রাইভেট ক্লাসের, যেগুলা বাহিরে আপলোড দেয়া টোটালি নিষেধ, শেয়ার করা, পাবলিশ করা নিষেধ, অনুরুপভাবে কিছু বইয়ের নতুন পিডিএফ থাকে, কিছু এ্যাপস আছে প্রিমিয়াম পেইড, যেগুলা প্রকাশের সাথে সাথেই পিডিএফ উন্মুক্ত করে দিলে, সাথে সেই সফটওয়্যার প্রিমিয়াম কপি পাবলিশ করে দিলে : মালিকরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং এসব প্রকাশে তাদের নিষেধাজ্ঞা থাকে সুস্পষ্ট : তাহলে এমন পিডিএফ বা এমন কোর্স বা এমন প্রিমিয়াম এ্যাপ ব্যক্তিগতভাবেও ব্যবহারের অনুমতি নাই। যদিও সে অন্য কারোর কাছে শেয়ার না করে, তথাপি নিজে নিজেও ব্যবহার করতে পারবে না।
কারণ নতুন নতুন কোর্স বা বইয়ের পিডিএফ বা প্রিমিয়াম এ্যাপসগুলো ফ্রি পাবলিশ করলে এর দ্বারা নিশ্চিতভাবেই মালিকদের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এবং ক্ষতি হবেও। তাই তাদের "সত্ত্বাধিকারী সংরক্ষিত" কথাটি এখানে শরয়ীভাবে খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই ব্যক্তিগতভাবেও এখানে ফ্রি ফ্রি উপকৃত হওয়ার সুযোগ নাই। ব্যাবহার করা জায়েজ হবে না। সুতরাং নতুন কোন কোর্স/এ্যাপস/পিডিএফ কিনেই নিজের কোন বন্ধু বা কোন কলিগকে শেয়ার করাটা আমানতের খেয়ানত হবে এবং কবিরা গোনাহ হবে, এবং যে নিবে তার জন্যও জায়েজ হবে না।
(২) সদ্য প্রকাশিত কোন বই যদি সমসাময়িক সময়ের জন্য খুবই জরুরী হয়ে থাকে, কিন্তু তা সহজলভ্য নয়, পাওয়া যায় না, অথবা বাস্তবেই তার ক্রয়ের সামর্থ নাই অথচ সেটি খুবই জরুরীঃ তাহলে সেটির পিডিএফ পড়ার সুযোগ আছে, তবে সুযোগ থাকলে অবশ্যই মুল প্রকাশনী বা মালিক থেকে অনুমতি নেয়া উত্তম। যদিও এই মতের উপর আপত্তি করার সুযোগ আছে। কিন্তু কোর্স এবং এ্যাপসের অনুমতি নাই। কারণ বইয়ের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ঈলম সংক্রান্ত বিষয়, জ্ঞান বিতরণই উদ্দেশ্য, যা মানুষের জন্যই লেখা হয়েছে। পক্ষান্তরে পেইড কোর্স বা পেইড এ্যাপ গ্রাহকদের জন্য খাস, সেগুলো ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যটিই বেশি প্রাধান্য পায় ।
(৩) বই বা এ্যাপস বা কোর্সের পক্ষ থেকে যদি কোন প্রকার রেস্ট্রিকেশন না থাকে, এগুলোর ফ্রি ভার্সন বের করার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকে অথবা তাদের মৌন সম্মতি থাকেঃ তাহলে ব্যক্তিগতভাবে তা থেকে উপকৃত হওয়া, এমনকি বই প্রিন্ট করে শুধুমাত্র নিজের কাছে রেখে পড়ার জন্য জায়েজ আছে।
দ্বিতীয় পয়েন্ট "খ", নিজে ব্যবহার করে, অন্যকেও শেয়ার করেঃ
(১) যদি একেবারে নতুন পিডিএফ অথবা এ্যাপস অথবা কোর্স হয়; তাহলে কোনভাবেই সেটি সর্বত্র পাবলিশ, অন্যকে শেয়ার করার সুযোগ নাই। কারণ এর দ্বারা মালিকের হক্ব নষ্ট করা হয়। কোন জিনিস মেহনত করে তৈরীর একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে তা থেকে কিছু বেনিফিট বা মুনাফা অর্জন করা। এখন কেউ কোনক্রমে ফ্রি এ্যাপস/কোর্স/পিডিএফ পেয়ে যদি সেটি পাবলিক করে, তাহলে মালিকের শতভাগ ক্ষতি হবে। আর এটি একেবারেই নাজায়েজ; এই মাসআলা তখন, যখন উল্লেখিত এ্যাপস/পিডিএফ/কোর্স একদম বা মোটামোটি নতুন হয়।
(২) এগুলা যদি এতটা পুরাতন হয়ে যায়, যার দ্বারা এতদিনে মালিকের মুনাফা মোটামোটি অর্জব হয়ে গিয়েছে বা এতবেশি পাবলিক হয়ে যায়, যেটা একেবারেই সবার জন্যই সহজলভ্য, সবখানে পাওয়া যাচ্ছে; তাহলে তা অন্যকে শেয়ার করার সুযোগ আছে। এতে গোনাহ হবে না। মোটকথা যেসব বইয়ের স্বত্ব সংরক্ষণের ঘোষণা দেওয়া হয়নি অথবা তার স্বত্বাধিকারী পিডিএফ প্রচার করা হচ্ছে জেনেও অসন্তোষ প্রকাশ করেনি অথবা প্রতিবাদ করেনি, এমন বই দ্বারা নিজে উপকৃত হওয়া এবং অন্যকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
তৃতীয় পয়েন্ট "গ", ব্যবসা করাঃ
উল্লেখিত জিনিসগুলো একেবারে নতুন বা মোটামোটি নতুন বা যথেষ্ঠ পুরাতন যেটাই হোক; যদি মালিকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকে যে এগুলোর দ্বারা কোন প্রকার ব্যবসা, প্রিন্ট করে বিক্রি করা, বাজারজাত করা নিষেধ থাকে; তাহলে এগুলোকে কখনোই বাণিজ্যিক বাজারজাত করার কোন প্রকার সুযোগ নাই। হ্যাঁ, নিজের জন্য প্রিন্ট করে নিয়ে রাখতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়া দেয়ার জন্য প্রিন্ট করতে পারবে। তবে এগুলোর কোনটিই বিক্রি করার সুযোগ নেই।
যেসব পিডিএফ বই/কোর্স/এ্যাপস অনলাইনে পাওয়া যায় এবং তাতে স্বত্ব সংরক্ষণের ঘোষণা থাকে, কিন্তু এ কথা জানা যায় যে এটা স্বত্বাধিকারীর অনুমতিতে পিডিএফ করা হয়েছে, নাকি অনুমতি ছাড়াই পিডিএফ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের প্রবল ধারণা অনুযায়ী আমল করবে। যদি ব্যক্তির প্রবল ধারণা হয় স্বত্বাধিকারী এতে সন্তুষ্ট নয়, তবে তাকওয়ার দাবি হলো এগুলো পরিহার করা। এর পরও কেউ যদি তা দ্বারা উপকৃত হয়, তবে তার জন্য তা নাজায়েজ হবে না। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে প্রকাশকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর এর দায় বর্তাবে, পাঠকের ওপর নয়। তবে একেবারে নতুন হলে তো অবশ্যই এসব থেকে বিরত থাকবে।
উল্লেখ্য যেঃ আমাদের ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে যে উইন্ডোজ ব্যবহার করি বা মাইক্রোসফট অফিস, ভিপিএন, এন্টি ভাইরাসসহ মিডিয়ার কাজের জন্য অনেক পেইড সফটওয়্যারের ক্র্যাকড ভার্সন বিনামূল্যে ব্যবহার করি, মুলত এই সফটওয়্যারগুলোর মালিক হারবি কা*ফে*র'রা। হারবি কা'ফে-র"দের সকল সম্পদ মুসলিমদের জন্য হালাল, যতক্ষণ না তারা আমাদের সঙ্গে কোনো চুক্তির আওতায় আসে এবং তাদের সম্পদ সংগ্রহে তাদের সঙ্গে কৃত কোনো চুক্তি বা ওয়াদা ভঙ্গ করা না হয়। সুতরাং তাদের তৈরি এসব সফটওয়্যারের ক্র্যাকড ও পাইরেটেড ভার্সন (নেট থেকে হোক বা দোকান থেকে কিনে হোক) ব্যবহার করতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই। বাজারজাত করাও জায়েজ আছে।